সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫, ০৬:১২ অপরাহ্ন

উলিপুরে আশ্রায়নের ঘর পেয়ে দুঃখ ঘুচেছে ১৫ রবিদাস পরিবারের

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:: জীবনে কোন দিন ভাবী নাই পাকা বাড়ী পামো। এখন আর বন্যা আসপার নয, নদীও ভাংগবার নয়। শেখের বেটির ঘর পায়া হামার থাকনের কষ্ট দূর হইছে। কথা গুলো বলতে বলতে দু’চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিল, রবিদাস সম্প্রদায়ের ষাটোর্দ্ধ বৃদ্ধা শ্রীমতি মন্জরী রবিদাসের। শুধু মন্জরী রবিদাস নয় এরকম গৃহহীন, ভূমিহীন ভাসমান ১৫টি রবিদাস পরিবার কুড়িগ্রামের উলিপুরে আশ্রায়ন প্রকল্পের আওতায় গড়ে তোলা রবিদাস পল্লীতে আশ্রয় পেয়ে খুব খুশি।

সোমবার (১০ এপ্রিল) সরেজমিন ওই পল্লীতে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। প্রশাসনের এ উদ্দ্যোগে স্বাগত জানিয়েছেন এলাকার সুধীজন ও সচেতন মহল।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তর সুত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ন-৩ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার নদী ভাঙ্গন কবলিত হাতিয়া ইউনিয়নের অনন্তপুর কামারটারী গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে রবিদাস পল্লী। সম্প্রতি সেই পল্লীতে নদী ভাঙ্গা গৃহহীন ভাসমান ১৫টি রবিদাস পরিবারের কাছে ঘর গুলো হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রতি পরিবারের জন্য ২শতক জমিসহ ২ রুম বিশিষ্ট আধা পাকা টিন সেড ১টি ঘর, ১টি বাথরুম ও ১টি করে নলকুপ রয়েছে। চর ডিজাইনের প্রতিটি ঘরের নির্মান ব্যয় হয়েছে ২লাখ ৮৪ হাজার ৫’শ টাকা। ১৫টি ঘরের জন্য মোট ব্যয় হয়েছে ৪২ লাখ ৬৭ হাজার ৫’শ টাকা।

৫০ বছর ধরে ব্রহ্মপুত্র নদীর কিনারে বাঁধের রাস্তায় ঝুঁপরি ঘরে জীবন কাটিয়েছি। বছর বছর নদী ভাঙ্গে, হামার ঠিকানাও ভাঙ্গে। নদী হামাক তাড়ে (তাড়িয়ে) নিয়ে বেড়ায়। বর্ষাকালে ঝড়িত (বৃষ্টি) ভিজি। এখন আর নদী ভাংগবার নয়, ঝড়িত ভেজা নাংগবার নয়। নিজের মত করে এই পল্লীতে বসবাস করতে পারবো। ছেলে মেয়েদের স্কুলে ভর্ত্তি করাতে পারবো। এভাবে আশ্রায়নের ঘর পাওয়ার প্রশান্তির অনুভুতি প্রকাশ করলেন জোসনা রবিদাস, বিধবা ফেলানী রবিদাস, শ্যামল রবিদাস ও জয়ন্তী রবিদাস। গৃহহীন এই পরিবার গুলো সরকারের দেয়া এমন সুন্দর ঘর পেয়ে বেজায় খুশি। তারা জানান, ভগবান শ্যাখ হাসিনাকে বাঁচায় রাখুক, ভাল করুক।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার শোভন রাংসা বলেন, দলিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্টি যারা রবিদাস সম্প্রদায় বলে পরিচিত। এখনও তারা সমাজের মুল স্রোতের সাথে সামিল হতে পারেনি। ফলে তারা নানা অভাব অনটনের মধ্যে যাযাবর জীবন যাপন করে। তাই তাদের সমাজের মুল ধারার সাথে একিভুত করার জন্য এ উদ্দ্যোগ নেয়া হয়েছে। গৃহ প্রদানের মাধ্যমে ১৫টি রবিদাস পরিবারের স্থায়ী ভাবে আবাসন সমস্যার সমাধান করা হয়েছে।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু বলেন, প্রধানমন্ত্রী মমতাময়ী। তিনি চান এ দেশের প্রতিটি মানুষ নাগরিক সুবিধা পাক। প্রতিটি নাগরিক যেন সমান অধিকার ও সুযোগ সুবিধা পায় তা নিশ্চিত করার লক্ষে রবিদাস পল্লী নির্মান করা হয়েছে। এরফলে সুবিধা বঞ্চিত এই মানুষগুলো তাঁর নিজ পেশায় যেমন মনোযোগী হতে পারবেন একই সাথে নিজেদের ভবিষ্যত সম্পর্কে সচেতন হবেন।

কুড়িগ্রাম-৩ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক এম এ মতিন বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রথম সরকার প্রধান যিনি আশ্রয়হীনদের জন্য আধাপাকা ঘর এবং ২শতক জায়গা দান করেছেন। রবিদাস যারা সমাজে দরিদ্র এবং অবহেলিত শ্রেণির। এদের জন্য কেউ কখনো চিন্তা করেনি। এই সরকার যারা সমাজে একেবারে অবহেলিত, শোষিত, বঞ্চিত তাদের সকলকে খাদ্য, নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও থাকার ব্যবস্থা করেছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com